সাধের সংসার। পর্ব - ০১


৯ বছরের কন্যা সন্তান হ**ত্যার দায়ে পুলিশ ইমরান কে গ্রেফতার করতে এসেছে। 
ইমরানের পুরা বাড়ির ভিতরে এলাকার মানুষ জড়ো হয়েছে। 
এমন কি বাড়ির বাইরে শত শত মানুষ কানাঘুঁষা শুরু করে দিয়েছে। 
মানুষ ছুটে এসেছে কেমন করে একজন বাবা তার নিজ কন্যা সন্তান কে হ*ত্যা করতে পারে? 
পুরা এলাকা জুড়ে একটা একটা আতংক আর শোক বিরাজ করতেছে! 
নানান জায়গা থেকে মানুষ এসেছে, এমন ঘটনা এই এলাকায় আগে কখনও ঘটে নাই। 
সবাই জানে ইমরান খুব ভালো একটা ছেলে 
কিন্তু সে এমন কাজ করবে কেউ বিশ্বাস করতে পারতেছে। 
এই বছর দেড়েক আগে ইমরানের বাবা মারা গেলো, বোনটাও পাগল প্রায় হয়ে গেছে। 
এত সুন্দর একটা সংসারে কার নজর পড়লো আর 
কেনোই বা ইমরান নিজের কন্যা সন্তান কে হ**ত্যা করলো।
পুলিশঃ এই আপনারা এত মানুষ এখানে থাকবেন না? আপনারা দয়া করে দূরে সরে যান। 
আর ইউটিউব মিডিয়ার সাংবাদিক ভাইয়েরা একটু দূরত্ব বজায় রেখে ভিডিও করুন 
আর মানুষের কাছ থেকে যা জানার জেনে নেন?
পুলিশের এমন কথা শুনে লাশের আশেপাশে থাকা মানুষ গুলো দূরে সরে গেলো। 
সাংবাদিক গুলো ভিডিও করতেছে। 
সাংবাদিক গুলো এলাকার মানুষের কাছ থেকে ইমরান সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে। 
সবাই ইমরানের বিষয়ে ভালো ভালো কথা বলতেছে কেউ বিশ্বাস করতে পারতেছে না 
ইমরান এই জঘন্য কাজটা করবে। 
পুলিশের লোকেরা লাশের চার পাশ সাদা রঙ দিয়ে দাগ কেটে দিতেছে 
এবং চারদিক তাদের স্টিকার যুক্ত ফিতা দিয়ে ঘিরে দিলো। 
একটু পর একটা এ্যাম্বুলেন্স এসে লাশ টা গাড়িতে তুললো। 
এলাকার চেয়ারম্যানের সাথে পুলিশের নির্বাহী অফিসার এবং এস আই কথা বলতেছিলো।
চেয়ারম্যানঃ স্যার ইমরানের মত ভালো ছেলে এই এলাকায় একটাও নাই। 
আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারতেছি না ইমরান এই ধরনের কাজ করবে?

পুলিশঃ দেখুন চেয়ারম্যান সাহেব অনেক ভালো মানুষ এমন কিছু কাজ করে 
যা আমাদের ধারনার বাইরে। 
এই সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা ভালো মানুষের মুখোস ধারন করে 
অনেক রকম অনৈতিক এবং খারাপ কাজ করে থাকে।
চেয়ারম্যানঃ অসি সাহবে ইমরানের জন্ম বেড়ে উঠা সব আমাদের চোখের সামনে। 
ইমরান কে এ পর্যন্ত কোন খারাপ কাজ করতে দেখি নাই আমরা। 
ওর বাবা মা বোন সবাই অনেক ভালো ছিলো।
পুলিশঃ আপনার কথায় তো আর প্রমাণ হবে না ইমরান তার মেয়ে কে হ**ত্যা করে নাই। 
আমরা এসেই ধারালো ছুরি টা ইমরানের হাতে পেলাম আর ইমরান তো লাশের সামনেই বসে আছে। 
এই প্রমাণ টুকু কি যতেষ্ট নয় ইমরান হ**ত্যা করেছে তার কন্যা কে?
চেয়ারম্যানঃ আপনারা এসেছে ইমরান কে আসামি মনে করে ধরেছেন সব ঠিক আছে। 
কিন্তু স্যার আপনি কি আপনার চাকরি জীবনে দেখেছেন, 
অপরাধী অপরাধ করে সেখানে বসে থাকে? 
আবার অপরাধী অপরাধ করে সব আলামত এক জায়গায় রাখে 
কিংবা কেউ কখনও কাউকে হ**ত্যা করে লাশের পাশে বসে থাকে?
পুলিশঃ আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন?

চেয়ারম্যানঃ অসি সাহেব, এতটুকু অনুরোধ যে এই সাধের সংসার টা 
এমন নষ্ট করে দিলো এই ছোট্ট মাছুম বাচ্চা টাকে মেরে ফেললো তাকে খুঁজে বের করে 
কঠিন শাস্তি দিন। আর ইমরান যদি সত্যি অপরাধ করে থাকে 
তাহলে তাকেও কঠিন শাস্তি দিন আপনি?
পুলিশঃ আমরা আমাদের সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাবো। 
অপরাধ যে করেই থাকুন আইনের হাত থেকে কেউ রক্ষা পাবে না? 
এবার আপনি আপনার এলাকার মানুষদের কে সরে যেতে বললে 
আমরা ইমরান কে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাই।
আর এই বাড়িতে যারা আছে তারা যেনো কেউ আমাদের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও যেতে না পারে!
আর চেয়ারম্যান সাহেব আপনাকে কথা দিতেছি আসল অপরাধী কে আমরা বেঁর করবোই?

চেয়ারম্যানঃ এই সবাই সরে যাও পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করতে দিন। 
আমরাও চাই আসল অপরাধী ধরা পরুক আর কে অপরাধ করেছে সেটা আমরাও জানতে চাই।
চেয়ারম্যানের কথা শুনে সবাই জায়গা দিলো ইমরান কে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। 
ইমরান এখনও মেজেতে তার মেয়ের লাশের কাছে বসে আছে আর বোঁবা কান্না করে যাইতেছে।
এ্যাম্বুলেন্সের লোক এসে লাশ এ্যাম্বুলেন্সে তুললো। 
পুলিশ কনস্টেবল এসে ইমরানের কমড়ে মোটা রশি বাঁধলো এবং হাতে হ্যান্ডকাফ পড়ালো।
ইমরান কে নিয়ে পুলিশ কনস্টেবল পুলিশ ভ্যানে তুললো। 
পুলিশ অফিসারের কাছে সাংবাদিক গুলো দৌড়ে এলো।
সাংবাদিকঃ স্যার এই শিশু কন্যা নুসরাত কে কিভাবে 
আর কি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে আপনার ধারনা?
পুলিশঃ দেখুন প্রথমে হয়তো শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেছিলো, 
তারপর এই ধারালো ছুরি টা দিয়ে তার গলা কেটে ফেলা হয়েছে। 
বাকিটা ফরেনসিক রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বলতে পারতেছি না।
সাংবাদিকঃ স্যার ভিকটিম নুসরাত কে কি কারনে খুন করা হতে পারে বলে মনে করেন আপনারা?
পুলিশঃ আপাতো কিছুই বলতে পারতেছি না, 

সন্দেহ এবং লাশের কাছে ভিকটিমের বাবা কে ধরেছি। 
তাকে জিজ্ঞাসা করলেই সব জানতে পারবো 
আর সাংবাদিক সম্মেলন করে আপনাদের কেও সব জানিয়ে দিতে পারবো।
দয়া করে আর কোন প্রশ্ন করবেন না এবার আমাদের যেতে দিন।
পুলিশ সাংবাদিক দের কে সরিয়ে দিয়ে যেতে লাগলো। 
ইমরান এখনও কোন বলতেছে না, 
এলাকার মানুষ সাংবাদিক চেয়ারম্যান ইমরানের চুপ থাকা দেখে। 
মনে করতেছে এই হ**ত্যা ইমরান করেছে। 
ইমরান এখনও চুপ করে আছে, 
পুলিশ ভ্যানের কাছে তার বন্ধু আত্মীয় পাড়া প্রতিবেশী সবাই একটা কথাই জিজ্ঞেস করতেছে ইমরান
তুই কি হত্যা করেছিস নাকি অন্য কেউ এই হত্যা করেছে। 
ইমরান তখনও চুপ করে আছে। এ্যাম্বুলেন্স লাশ নিয়ে আগেই হাসপাতালের দিকে রওনা দিয়েছে।
এবার পুলিশভ্যানও আসামি ইমরান কে নিয়ে রওনা দিয়ে দিলো।
চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে ইমরানের চাচাতো ভাই ভাবি চাচারা এগিয়ে এলো।
চাচাঃ চেয়ারম্যান সাহেব আমরা তো কিছুই বুঝলাম না ইমরান কেনো এই কাজটা করবে।
ইমরান তো ওর মেয়ে কে অনেক ভালোবাসে! বলা চলে ইমরানের জীবন ছিলো নুসরাত।
চেয়ারম্যানঃ মকবুল মিয়া আমিও সেটাই ভাবতেছি!
আর তোমরা যদি এখানে থাকতে তাহলে একটা কথা ছিলো সব কিছু জানতে পারতে।
চাচাঃ এটা তো আর আমাদের বাবার বাড়ি না, 

বড় ভাইয়ের ভাগের জমি এখানে দেখে আমাদের বাড়ি ছেড়ে এখানে এসে বাড়ি করলো।
তারপর তো সুখেই তাদের দিন যেতে থাকলো।
এমন নয় যে আমরা কেউ খোঁজ খবর নিতাম না।
চেয়ারম্যানঃ তা সব তো আমি জানি, একটু পর আমি থানায় যাবো দেখি কি হয়।
আর ইমরানের জামিনের ব্যবস্থা করতে পারি কি না।
তোমরা যে যার বাড়িতে যাও পরে ডাক দিলে এসো লাশ দেখি কখন পাঠিয়ে দেয়।
পারলে বাঁশ কাটো খবর খুরে রাখো তোমরা।
চেয়ারম্যান সাহেব চলে গেলো, ধীরে ধীরে ইমরানের বাড়ি থেকে সবাই চলে যেতে লাগলো।
 ইমরানের চাচা এবার ইমরানের বউয়ের কাছে গেলো।
 বেচারি কাঁদতে কাঁদতে কেমন নিস্তেজ হয়ে গেছে।
 এখনও ইমরানের শ্বশুড় বাড়ির কেউ আসে নাই।
 আহ ইমরানের বউয়ের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
 কোলে তার অবুঝ ছেলে বাচ্চা টা সেও ক্ষুদার কারনে অনেকক্ষণ থেকে কাঁন্না করেই যাচ্ছে।
ইমরানের চাচি ভাবি চাচা চাচাতো ভাই এবার রিপার কাছে গেলো।
রিপা হলো ইমরানের বউ আর তার কোলে ৭ মাসের ছেলে বাচ্চা রাফিন।
চাচিঃ বউ এভাবে আর কাঁন্না করো না, 

যাও আগে রাফিন দাদু ভাই কে দুধ খাওয়াও অনেকক্ষণ থেকে কাঁন্না করতেছে।
রিপা চাচি শ্বাশুড়ি কথা মত ঘরের ভিতরে গিয়ে রাফিন কে বুকের দুধ খাওয়াতে লাগলো।
বাচ্চা টা দুধ মুখে নিয়েই কান্না থামিয়ে দিয়ে মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে গেলো।
রিপা এবার রাফিন কে বিছানায় ঘুমিয়ে দিয়ে বাইরে এসে চাচি শ্বাশুড়ি কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
রিপাঃ আম্মা কি থেকে কি হয়ে গেলো। জীবন টা যে এলোমেলো হয়ে গেলো।
আমার মেয়ে টা কে সে কেনো হত্যা করলো। 
মেয়েটা কে তো সে অনেক ভালোবাসতো আম্মা।( কেঁদে)
চাচিঃ আচ্ছা বউ মা একটা কথা বলো তো ইমরান তো
নুসরাত কে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবসতো তাহলে সে কেনো নুসরাত কে হত্যা করবে?
রিপাঃ আম্মা গো তোমার নাতনী
আজ এক সপ্তাহ ধরে তোমার ভাতিজার কাছে একটা নতুন জামা আর একটা সাইকেল কিনে চাইতেছিলো।
তোমার ভাতিজা বার বার তোমার নাতনীকে মানা করে তার কাছে টাকা নাই।
একদিন তো রাগ হয়ে নুসরাতের গায়ে হাতও তোলে সে।
কাল রাতেও নুসরাত খুব বায়না ধরেছিলো গো, আর আজকে দেখেন কি থেকে কি হয়ে গেলো।( কেঁদে)
ভাবিঃ রিপা কালকে তো ইমরান আমার শ্বশুড়ের কাছ থেকে টাকা নিলো 
নুসরাত কে সাইকেল আর জামা কিনে দিবে বলে।

ইমরানের কাছে নাকি টাকা নাই, জমির ধান ফসল উঠলে টাকা হবে তখন টাকা দিবে।
আর আমার শ্বশুড় তো টাকা দিলো তাহলে নুসরাত কে কেনো মারবে ইমরান?
চাচিঃ আচ্ছা বউ যখন নুসরাত কে ইমরান মারলো তুমি কৈ ছিলা?
রিপাঃ আম্মা আমি তখন গভীর ঘুমে, জানি না কাল কেনো এত ঘুম আসছিলো চোখে আমার।
ঘুম থেকে উঠে দেখি পুরা মেজেতে আমার কলিজার টুকরার রক্ত বান যাইতেছে।
আর নুসরাতের পাশে আপনার ভাতিজা ঐ ছুরিটা নিয়ে বসে কপালে হাত দিয়ে।
আর নিজে নিজে বলতেছে আর তোকে সাইকেল আর জামা কিনে দেওয়া হলো না আমার।(কেঁদে)
ভাবিঃ তারপর কি হলো রিপা? ( অবাক হয়ে)
রিপাঃ যখন ঘুম থেকে উঠে এসব দেখি আমি চক্কর খাওয়ার অবস্থায় 
তারপর কুল কিনারা না পেয়ে রক্ত রক্ত আমার নুসরাতের রক্ত বলে চিল্লাতে থাকি 
তখনই এলাকার আশেপাশের মানুষ এখানে জড়ো হতে থাকে আর তারাই থানায় ফোন দেয়।
চাচিঃ বউ তুমি পুলিশের সামনে কেন কিছুই বললে না?
রিপাঃ আম্মা গো আমি যদি কিছু বলি তাহলে যদি আমার স্বামীর আরো বড় ক্ষতি হয়
এই ভয়ে বলি নাই।( কেঁদে)
চাচাঃ আচ্ছা তখন ঈশিতা কোথায় ছিলো( ঈশিতা হলো ইমরানের বোন)
রিপাঃ চাচা ঈশিতা তো পাগল 
তাকে তো ঐ গোয়াল ঘরের পাশে আপনার ভাতিজা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। 
ঈশিতা কি জানতো তার ভাই তার আদরের ভাতিজি কে মেরে ফেলবে( বলেই জোরে কাঁদতে লাগলো)
চাচিঃ এসব বাদ দাও, যাও গিয়ে বাঁশ কাটো আর খবর যে খুরে তাকে কবর দাও। 
আর তোমরা বাপ ছেলে আগে ঘর থেকে একটা চৌকি বের করো লাশ আসলে গোসল দিতে হবে তো।
ইমরানের চাচির কথা শুনে তার ছেলে আর স্বামী ঘর থেকে চৌকি বের করে আনলো। 
তারপর চারদিক ভালো করে কালো পর্দা দিয়ে ঢেকে দিলো 
আর চৌকিটা পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে লাগলো। 

চৌকি ধোয়া হলে একজন গেলো বাঁশ কাটতে আর একজন গেলো কবর যে খুড়ে থাকে ডাকতে।
এতক্ষণ এসব কিছু টিভিতে দেখতেছিলো রিপার মা বাবা। 
তারা আর দেরি না করে তাদের মেয়ে কে ফোন দিলো।
রিপাঃ আব্বা তুমি তারাতারি আসো মাকে নিয়ে বাড়িতে অনেক বড় অঘটন ঘটে গেছে।
রিপার আব্বাঃ আমরা তো মাত্র টিভিতে এসব দেখলাম। 
আমরা এক্ষুনি আসতেছি মা। তুই চিন্তা করিস না।
ফোন কেটে দিয়ে রিপার মা ভাই বোন কে নিয়ে রিপার বাবা ইমরানের বাড়ির দিকে রওনা দিলো। 
রিপার পরিবারের সবাই আসার কিছুক্ষণ পর নুসরাতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে 
মানে কাটাছেঁড়া বুঝেন তো করার পর বাড়িতে আসলো। 
বাড়ির মহিলা মানুষ গুলো ছোট্ট নুসরাতের লাশ চৌকিতে শুইয়ে দিয়ে গোসল দিলো তারপর সাদা কাপড় পড়ালো। 
এবার অপেক্ষা চেয়ারম্যান গেছে থানায় ইমরান কে আনার জন্য 
তাে মেয়ের জানাজা হবে তাকে তো লাগবেই!
চেয়ারম্যানঃ অসি সাহেব ইমরান কে কি একটু সময়ের জন্য ছেড়ে দেওয়া যায় না।
না মানে ওর মেয়ের লাশ তো ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে এসেছে। 
নিজের মেয়ের জানাজায় তো তাকে লাগবে নাকি? খুনি হলেও তো সে একজন পিতা।
পুলিশঃ চেয়ারম্যান সাহেব, ধরে এনেছি থেকে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেনি এই আসামি দেখেন না
কেমন করে বসে আছে। 

এখন পর্যন্ত ওর গায়ে হাত তুলি নাই। আদালতের রিমান্ডের অপেক্ষায় আছি, আর আপনি কিনা এসেছেন একে নিয়ে যেতে?
চেয়ারম্যানঃ আমি যেহেতু জনপ্রতিনিধি সেহেতু আমাকে আসতেই হবে স্যার। স্যার আগেই যদি রিমান্ড নেন তো আসল আসামি কে ধরবেন কবে?
পুলিশঃ আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন ইমরান আসামি নয়? নাকি এই খুনের পিছনে আপনার হাত আছে চেয়ারম্যান সাহেব?
চেয়ারম্যানঃ স্যার কে অপরাধী কে আসামি সেটা আপনারাই বের করবেন সেটা আমার কাজ নয়।
আর হ্যাঁ স্যার আগেও কিন্তু বলেছি ইমরান এই কাজ করতে পারে না। 
সেই বিশ্বাস আর ভরসায় ভর করে আপনাকে বললাম।
পুলিশঃ একবার রিমান্ড টা পেয়ে যাই তারপর সব বেরিয়ে আসবে। 
কে আসামি আর কে অপরাধী, তখন দেখা যাবে কে বাঁচে আর কে মরে। 
নুসরাতের মত আমার ঘরেও একটা কন্যা সন্তান আছে। 
সব সময় নিজের ছায়া করে রাখি তারে, এই পাষণ্ড কিনা নিজ মেয়ে কে হ**ত্যা করেছে। 
নুসরাত কে দেখেই আমার মেয়ের কথা বার বার মনে পড়তেছে।
চেয়ারম্যানঃ স্যার সব বুঝি কি করবো বলেন, জনপ্রতিনিধি কিছু করার নাই। 
আর আপনিও আইনের লোক আইনের বাইরে আপনিও যেতে পারেন না। 
স্যার একটু সহায় হোন অন্তত মেয়েটার জানাজায় থাকুক ইমরান?

পুলিশঃ আদালতের কিংবা ডিসি স্যারের অনুমতি ছাড়া আমি তাকে নিয়ে যেতে দিবো না।
চেয়ারম্যানঃ স্যার লাশ অনেকক্ষণ আগেই এসেছে গোসল সাদা কাপড় পড়ানো সব হয়ে গেছে 
এখন শুধু ইমরান কে নিয়ে যাওয়া বাকি। দয়া করুন স্যার
পুলিশঃ আসামী পালিয়ে গেলে তার দায় ভার কে নিবে?
চেয়ারম্যানঃ স্যার ইমরান পালাবে না এটা আমার বিশ্বাস! 
আর যদি ইমরান পালিয়ে যায় তার বদলে আমাকে থানায় রাখিয়েন। 
আর তাছাড়া ইমরান তো একা যাবে না। সাথে তো আপনার পুলিশও যাবে।
এসআই সাহেব অনুমতি দিলেন, 
কিন্তু ইমরানের কোমড়ে রশি বাঁধা থাকবে আর হাতে হ্যান্ডকাফ পড়া থাকবে 
এবং সাথে তিনজন কনস্টেবল যাবে। 
এসআই যেতে পারবে না 
আর একজায়গায় জমি বিরোধ নিয়ে পারিবারিক ঝামেলা চলছে সেখানে যাবেন তিনি।
পুলিশ ভ্যানে ইমরান চেয়ারম্যান এবং কনস্টেবল উঠলো। 
ইমরান নিয়ে আবারো তার বাড়ি যাবে তারা।
বাড়ি এসে দেখে হাজার খানেক মানুষ হবে জড়ো হয়ে আছে। 
সাথে অনেক সাংবাদিক ইমরানের আত্মীয় তার বউয়ের আত্মীয় সবাই এসেছে। 
পুলিশ ভ্যান আসার সাথে সাথে সবাই সেদিকে এগিয়ে গেলো। 
পুলিশ তার বাঁশি বাজিয়ে সবাই কে দূরে যেতে বলল। 

ইমরানের শ্বশুর এগিয়ে এসে ইমরানের গালে সজোড়ে থাপ্পড় দিলো!
ইমরান অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিন্তু মুখে কিছুই বললো না।
রিপার বাবাঃ তোমাকে আমি অনেক ভালো ছেলে মনে করতাম। 
তোমাকে অন্য জামাইর চেয়ে খুব বিশ্বাস করতাম 
আর সেই তুমি কিনা ফুলের মত নিঃস্ব পাপ বাচ্চা মেয়ে টাকে গলা কেটে হত্যা করলে।
রিপার মাঃ জামাই তুমি এই কাজ টা কেমন করে করতে পারলে? 
ফুলের মত বাচ্চা টাকে মারার আগে তোমার হাত কি একবারের৷ জন্য কেঁপে উঠে নাই?
রিপার ভাইঃ দুলাভাই আপনি মানুষ নাকি পশু, 
আরে একটা পশুও তো তার নিজের বাচ্চা কে বাঁচানোর জন্য জীবন দিয়ে দেয়। 
আর আপনি কেমন করে আমাদের আদরের ভাগ্নি কে মারতে পারলেন?( কেঁদে)
চেয়ারম্যানঃ হয়েছে আর তাকে এভাবে বলতে হবে না। 
এভাবে বললে তো আর আপনাদের নাতনী আর ভাগ্নি ফিরে আসবে না। 
অনেক অনুরোধ করে থানা থেকে অনুমতি নিয়ে ইমরান কে নিয়ে আসলাম। 
আপনারা আর ঝামেলা বাঁধাবেন না।

চেয়ারম্যান সাহেবের কথা শুনে কেউ আর কোন বলল না। 
এতক্ষণ ধরে শুধু ইমরান তাদের কথা শুনতেছিলো। 
ইমরানের চোখ বার বার তার বউ রিপা কে খুঁজতেছিলো। 
কিন্তু রিপা তার চোখের আড়ালে, ইমরান ভেবে পায় না 
রিপা কি তাকে আদৌ ভালোবাসে নাকি মনের ভিতরে অন্য কিছু। 
এতক্ষণ তার বাবা মা ভাই যা যা বলল তাদের সেই কথার কি উত্তর দিতে পারতো না রিপা?
 রিপাকে বা ইমরান কি বলবে ইমরান তো অপরাধী, 
আর অপরাধীর সাথে নিশ্চয়ই কেউ ভালো ব্যবহার করে না?

চলবে...

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url