সাধের সংসার। পর্ব - ০২
হাতে হ্যান্ডকাফ আর কোমড়ে রশি বাঁধা অবস্থায় ইমরান গোসল করতে।
ওই পোশাকে ওই অবস্থায় ইমরান ইমরান গোসল করলো
মাগরিবের নামাজ শেষ হলে লাশ নিয়ে মসজিদের মাঠে সবাই উপস্থিত হলো।
জানাজা শেষে মৃত্যু নুসরাত কে দাফন করা হলো।
নুসরাতের কবরে যখন ইমরান মাটি দিতেছিলো তখন ইমরান চিৎকার করে কাঁন্না করতেছিলো।
ইমরানের কাঁন্না করা দেখে সেখানে উপস্থিত থাকা সবাই অবাক হয়ে গেলো।
নিজের মেয়ে কে হ**ত্যা করে আবার নিজেই চিৎকার করে কাঁদে।
ইমরান কি পাগল হয়ে গেলো নাকি।
মাটি দেওয়া শেষ হয়ে গেলে ইমরান মেয়ের কবরের উপড় শুয়ে কাঁদতে লাগলো
কিন্তু মুখ দিয়ে কিছুই বলতেছে না। ইমরান যেনো নিজে কে বিশ্বাস করতে পারছে না।
কি থেকে কি হয়ে গেলো তার সাথে। পরে এলাকাবাসী তাকে কবরের উপড় থেকে তুললো।
পুলিশ সাথে সাথে ইমরান কে নিয়ে চলে গেলো।
ইমরান যাওয়ার পর চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে রিপা আর তার পরিবারের লোকজন গেলো।
রিপাঃ চেয়ারম্যান চাচা একা বাড়ি এই শিশু সন্তান নিয়ে কি করে থাকবো আমি।
তাই আমি চাই আমি আমার বাবা মায়ের সাথে বাড়ি যেতে।
চেয়ারম্যানঃ দেখো যেটা ভালো মনে করো তুমি।
পুলিশ তো বলে গেছে এই বাড়ির কোন লোক যেনো তাদের অনুমতি ছাড়া কোথাও না যায়।
রিপার বাবাঃ আপনি এলাকার চেয়ারম্যান,
তাছাড়া এই বাড়িতে একা একলা মেয়ে কেমন করে থাকবে বলুন।
আর পুলিশ যখনই ডাক দিবে আমি আমার মেয়ে কে নিয়ে সেখানে হাজির হবো।
চেয়ারম্যানঃ ঈশিতা তাহলে কার কাছে থাকবে বলুন? সেও তো সুস্থ না,
তার দেখা শুনা কে করবে এখন।
মা রিপা স্বামী শ্বশুড়ের ভিটে মাটি ছেড়ে গিয়ে কি বাবার বাড়িতে মন বসবে তোমার?
রিপাঃ চাচা এখানে থাকলে যে আমি ঠিক থাকতে পারবো না!
আমার মেয়ের কথা আর স্বামীর কথা যে বার বার মনে পড়বে তখন কে আমার পাশে থাকবে।
তাছাড়া ইশিতার চাচা চাচি তো আছেনই।
চাচাঃ বউমা তুমি তোমার মা না হয় তিন টা দিন এখানে থাকো।
দরকার হলে তোমার চাচি শ্বাশুড়িও এখানে থাকবে।
তারপর না হয় তুমি তোমার বাবা মায়ের সাথে চলে যেও।
চাচিঃ হ্যাঁ বউ মা এ অবস্থায় চলে গেলে এলাকার মানুষ নানা রকম কথা বলবে তখন।
রিপার মাঃ এলাকার মানুষের কথা কথায়
কান দিলে কি আর না দিলে কি আমাদের নাতনী তো আর ফিরে আসবে না।
রিপার ভাইঃ তবুও আপু চেয়ারম্যান সাহেব আর দুলাভাইয়ের চাচা
যেহেতু বলতেছে তিনটা থাকো না।
এমনি মরা বাড়ি তাছাড়া বাড়ি ছেড়ে গেলে ইশিতার কি হবে।
এই তিন দিন সব কিছু ঠিক করে নিয়ে নাও পরে আমি আর বাবা এসে তোমাকে নিয়ে যাবো না হয়।
চেয়ারম্যানঃ এটা অবশ্য ঠিক আছে, আমিও পুলিশ অফিসার কে বলে
তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে পাঠাতে পারবো।
শেষে সবাই এই কথায় রাজি হলো।
ঈশিতা কে চাচা চাচির কাছে রাখা হবে আর রিপা তার কোলের সন্তান কে নিয়ে
বাবার বাড়ি চলে যাবে।
ইমরানের যদি ফাঁ**সি হয় কিংবা জেল হয় তখন এই সম্পত্তি
রিপা আর তার ছেলের নামে দেওয়া হবে।
আর যেহেতু চাচা চাচির কাছে ঈশিতা থাকবে সেহেতু ঈশিতার নামের যদি ভোগ দখল করবে
তার চাচা। চেয়ারম্যান সাহেব যাওয়ার আগে সন্দেহর দৃষ্টিতে দুজনের দিকে তাকালেন।
হতে পারে এদের দুজনের একজন এই নুসরাত হ**ত্যার সাথে জরিত আছে।
চেয়ারম্যান সাহেব কিছু না বলে আপন মনে চলে গেলো।
ইমরানের চাচা চাচতো ভাই ভাবি ওরাও গেলো।
রিপার বাবা ভাই ভাবি তারাও গেলো, বাড়ি থাকলো রিপা, রিপার মা, রিপার চাচি শ্বাশুড়ি
এবং ঈশিতা। বাড়িতে এখনও শোকের মাতম চলতেছে,
এর মাঝে রিপার ফোনে একটা কল আসলো।
রিপাঃ আমার এখানে থাকতে একটুও ভালো লাগতেছে না।
মেয়েটাও নাই মেয়ের বাপও নাই এখন কি করে এখানে থাকবো আমি!
অপরিচিত লোকঃ কিছুদিন থাকো তারপর সব ম্যানেজ করে তোমার বাড়ি চলে যেও।
রিপাঃ এখন তো বাবার বাড়ি যেতে হবেই, এখানে থাকলে আমি বাঁচতে পারবো না।
এখানে সুখও পাবো না আমি।
অপরিচিত লোকঃ সময় হলে সুখ এমনিতেই চলে আসবে।
কয়টা দিন তো মানিয়ে নিতে হবে নাকি?
আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর রিপা ফোন টা কেটে দিলো।
রাতের খাবার ইমরানের চাচা দিয়ে গেলো।
কোন রকমে সবাই রাতের খাবার টা খেলো।
রিপা তার কোলের সন্তান কে অনেক ভালোবাসে।
এই কোলের সন্তান ছাড়া রিপা এখন চলতেও পারে না বলা চলে।
যখন থেকে রাফিন তার পেঠে ছিলো তখন থেকেই রিপা খুব সাবধানে চলাফেরা
নিজের যত্ন নেওয়া সব করেছে। রাফিনের জন্মের পর তো সব থেকে বেশি খুশি রিপাই ছিলো।
পরের দিনের ঘটনা, আদালত ইমরান কে চার দিনের রিমান্ড দিয়েছে।
যে পুলিশ তাকে ধরেছে সেই পুলিশ গুলোর কেউ ইমরান কে মারতেছে না।
ইমরানের মুখ জবানি নেওয়ার জন্য আলাদা পুলিশ এসেছে।
ইমরান কে এমন কোন অত্যাচার নাই যে রিমান্ডে পুলিশ করে নাই।
তবুও ইমরান মুখ দিয়ে একটা কথাও বলে নাই।
যে ইমরান হাজারো কথা বলতো সেই ইমরান এখন কেনো জানি বোবা হয়ে গেছে।
টানা তিন দিন ইমরান রিমান্ডে থাকার পর যখন মুখ খুলতেছিলো না ঠিক তখনই
হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট আসলো নুসরাত কে একজন নয় বরং তিনজন মিলে হ***ত্যা করেছে।
এবার তো পুলিশের মাথা ঘুরে গেলো।
ঠিক তখনই থানায় হাজির হলো ইমরানের এলাকার চেয়ারম্যান।
পুলিশঃ আপনি এসেছেন খুব ভালো হয়েছে। মাত্র আমাদের হাতে নুসরাত হ**ত্যার রিপোর্ট এসেছে। কিন্তু এদিকে ইমরান তো মুখ খুলতেছে না।
চেয়ারম্যানঃ তা রিপোর্টে কি এসেছে, আর ইমরানই বা কেনো মুখ খুলতেছে না।
পুলিশঃ রিপোর্টের কথা তো আমরা আপনাকে জানাতে পারবো না। এটা আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কাজ। আপনি কি আমাদের একটু সাহায্য করতে পারেন?
চেয়ারম্যানঃ হটাৎ আমার সাহায্য কেনো স্যার?
পুলিশঃ হ্যাঁ আপনার সাহায্যের খুব দরকার।
আপনি দয়া করে একটু ইমরানের সাথে কথা বলবেন যেনো সে আমাদের সব কিছু বিস্তারিত বলে।
যদিও বা রিমান্ডে থাকা আসামীর সাথে কারো যোগাযোগ কথা বলার নিয়ম নাই তবুও আমি আপনাকে অনুমতি দিতেছি এবং ইমরানের মুখ দিয়ে কথা বের করার জন্য।
চেয়ারম্যানঃ কি যে বলেন না স্যার, অবশ্যই আমি এই কাজ করবো।
হ্যাঁ ইমরান আমাকে খুব মানে আমার সাথে তার দেখা হলে
সে অনেক কিছু আমাকে বলতেও পারে। ছেলে বড্ড একা,
দেখেন না এই তিন দিনে তার সাথে আমি ছাড়া কেউ দেখা করতে আসে নাই।
আর আসবেই বা কেমন করে তারা তো সবাই ভয়ে আছে যদি তারাও ফেঁসে যায়।
পুলিশঃ এত সব কথা রাখেন আপনি একটু ইমরানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করুন।
আপনাকে আমি ১০ মিনিট সময় দিতেছি। এত কথা বলেও লাভ নেই,
এই কেস টা নিয়ে সাংবাদিক গুলো যা শুরু করেছে উপর মহল থেকে শুধু চাপ আর চাপ
আসতেছে। ইতিমধ্যে আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অন্য বিভাগও কাজ শুরু করেছে এটা নিয়ে।
চেয়ারম্যান সাহেব টর্চার করা সেলে গেলো।
সেখানে গিয়ে দেখে ইমরানের শরীরে কোন কাপড় নেই আছে
শুধু তার ছোট্ট প্যান্ট টা পড়নে।
ইমরান কে উপুড় করে শুয়ে দিয়ে দুপা পিঠের কাছে এনে দু হাত দিয়ে বেঁধে রেখেছে।
শক্ত একটা ছোট্ট টেবিলের উপড় ইমরান কে রেখেছে।
পিঠ বরাবরা ১০০০ পাওয়ারের লাইট লাগালো।
একটা পুলিশ গিয়ে ইমরানের বাঁধন খুলে দিলো।
তারপে তাকে টেবিল থেকে নামিয়ে মেঝেতে বসিয়ে রাখলো।
ইমরানের পুরা শরীরে মারের দাগ।
ইমরান কে এই অবস্থায় দেখে চেয়ারম্যান সাহেবের চোখে পানি চলে আসলো।
সেখান থেকে পুলিশ টা চলে গেলো।
চেয়ারম্যান সাহেব ইমরানের কাছে এগিয়ে গিয়ে তার পাশে বসলো।
চেয়ারম্যান কে জরিয়ে ধরে ইমরান কাঁন্না করতে লাগলো।
ইমরানের কাঁন্না করা দেখে চেয়ারম্যানও কাঁন্না করতে লাগলো।
চেয়ারম্যানঃ এভাবে কাঁদিস না ইমরান,
আমি জানি তুই এই জঘন্য কাজ টা করিস নাই। আমার তোর প্রতি বিশ্বাস আছে।
ইমরানঃ চাচা আমি সত্যি এই কাজ করি নাই।
আমার চোখের সামনে আর মেয়েটা মরে গেলো আমি বাবা হয়ে তাকে বাঁচাতে পারি নাই চাই চাচা!
চেয়ারম্যানঃ তাহলে পুলিশ কে সত্যি কথাটা তুই কেনো বলতেছিস না।
দেখ তোর কি অবস্থা করেছে ওরা, তুই পুলিশ কে সত্যি টা বলে দে দেখ বাকিটা আমি কি করি।
ইমরানঃ চাচা পুলিশ তো উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করে।
তারা তো আমাকে কথা বলার সুযোগ দেয় নাই।
তাদের কে কেমন করে বুঝাবো আমি আমার মেয়ে কে মারি নাই।
চাচা আমার মেয়ে যখন আমার সামনে মারা গেলো তখনই আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি।
আমি নিজেই নিজে কে বিশ্বাস করতে পারি নাই।
তারপর যখন সব মানুষ আমাকে দোষ দিতে ছিলো তখন তো আরো ভয় পেয়ে যাই।
এখানে যখন পুলিশ আমাকে নিয়ে এসে নানা রকম কথা গালাগালি করলো তখন তো মনে হয়ে
ছিলো এই বুঝি এবার আমিও মরে যাবো।
চাচা বিশ্বাস করেন এমন ভাবে মেরেছে কথা বলার বা কথার উত্তর দেওয়ার মত অবস্থায় ছিলাম না।
চেয়ারম্যানঃ তাহলে এখন বল কে তোর মেয়ে কে হ**ত্যা করেছে?
তারপর দেখ আমি কি কি করি।
ইমরানঃ হ্যাঁ চাচা সব বলবো আমি, চাচা আমি পানিইই
ওই অবস্থায় ইমরান জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
চেয়ারম্যান সাহেব তো ভয় পেয়ে গেলো। তিনি সেখান থেকে পুলিশ কে ডাকতে লাগলো।
পুলিশ দ্রুত সেলের ভিতরে আসলো।
এসে দেখে ইমরান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
অনেক মার খেয়েছে তার উপরে তিনদিন থেকে শুধু পানি ছাড়া ইমরান কে কিছুই খেতে দেয় নাই।
ইমরান কে পোশাক পড়িয়ে দ্রুত পুলিশের গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।
এদিকে
পরেরদিন সকাল থেকে রিপা বার বার চেয়ারম্যান কে ফোন দিতেছে।
আর চেয়ারম্যান সাহেব জেলার সব চেয়ে বড় উকিলের সাথে ইমরানের ব্যপারে কথা বলতেছে।
আর রিপার ফোন পেয়ে চেয়ারম্যান ফোন ধরলো।
চেয়ারম্যানঃ হ্যাঁ রিপা বলো কি হয়েছে এত ফোন দিতেছো কেনো?
রিপাঃ চাচা পুলিশের সাথে কি কথা বলেছেন। আমরা কি বাড়ি থেকে যেতে পারবো।
চেয়ারম্যানঃ কালকেই না বললাম, তিন দিন থাকা লাগবে তারপর।
স্বামী থানায় কোথায় তাকে বের করার চেষ্টা করবে তা না করে বাড়ি থেকে শুধু যেতে চাচ্ছো।
রিপাঃ চাচা আমিও চাই আমার স্বামী বের হয়ে আসুক।
কিন্তু চাচা যদি আমাকেও সন্দেহ করে ধরে তখন আমার দুধের শিশুে কি হবে চাচা।
চেয়ারম্যানঃ তোমার চাচা শ্বশুর সহ উকিলের কাছে এসেছি।
উকিলের সাথে কথা বলার পর দেখি থানায় গিয়ে কথা বলি।
রিপাঃ আচ্ছা চাচা, চাচা আমার স্বামী কে যেনো তারা ছেড়ে দেয়।
মেয়ে তো আমাদের, ওর বাবা খুন করেছে তাতে কি।
চাচা আমার স্বামী কে ফিরিয়ে আনুন,
মেয়ে গেছে আল্লাহ চাইলে আরো মেয়ে পাবো।
আমার স্বামী কে চাই চাচা
চেয়ারম্যানঃ পুলিশ কি আর এসব বুঝবে রিপা।
দেখি কত দুর কি করা যায় এবার রাখি।
ফোন রাখার পরেই ইমরানের চাচা চেয়ারম্যান কে জিজ্ঞেস করলো রিপা তাকে কেনো ফোন দিয়েছি। পরে ইমরানের চাচা কে চেয়ারম্যান সাহেব সব বলল।
তারপর আবার উকিলের সাথে কথা বলা শেষ করে তারা থানার দিকে রওনা দিলো।
কিন্তু তারা থানায় থাকা ইমরানের সাথে আর দেখা করতে পারবে না।
কারণ ইতিমধ্যে ইমরানের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।
সেখানে আর চেয়ারম্যান আর ইমরানের চাচা সময় নষ্ট না করে বাড়ির দিকে রওনা হলো।
বাড়িতে এসেই
চাচিঃ কি বললো উকিল আর পুলিশ?
চাচাঃ উকিল আপাতো জামিনের কিছুই করতে পারবে না। ইতিমধ্যে ইমরানের রিমান্ড মঞ্জুর হয়ে গেছে।
চাচিঃ এটা কি বলো তুমি, ছেলেটার কেউ নাই বলে তার সাথে এমন অন্যায় হবে।
চাচাঃ দেখো তুমি ভুল বুঝতেছো, পুলিশ তো আর আসামী কে ছাড়তে পারে না। তাছাড়া বউয়ের মুখে সব কিছু শুনেছো। ইমরান যদি সত্যি খুন করে না থাকে আর সে যদি জানে কে আসল অপরাধী তাহলে তার রিমান্ড বাতিল হতে পারে।
চেয়ারম্যানঃ তা রিপা তুমি কি একবার যাবে নাকি ইমরানের সাথে দেখা করতে?
রিপাঃ না চেয়ারম্যান চাচা আমি যাবো না।
আমার এমনিতেই থানা পুলিশ ভয় করে যা করার আপনারা দ্রুত করুন।
আমার মেয়ে তো আর ফেরত পাবোনা, কিন্তু আমার স্বামী কে জেনো তারা ছেড়ে দেয়।
চেয়ারম্যানঃ সব কিছু ইমরানের মুখ জবানির উপর নির্ভর করতেছে রিপা।
রিপাঃ চাচা এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতেছে।
এখানে আমার স্বামী নেই সন্তান নেই কেমন করে এখানে থাকি আমি।
চাচা পুলিশ কে বলে আমাকে আমার বাবা মায়ের সাথে যেতে দেন।
আমি তো আর কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি না?( কেঁদে)
রিপার মাঃ হ্যাঁ চেয়ারম্যান সাহেব আমার মেয়ে টা স্বামী সন্তান হারানোর শোকে দেখেন
এই দুদিনে কেমন হয়ে গেছে।
এই বাড়িতে আমার নাতনী খেলা করতো তার স্বামী ছিলো এখন দেখেন বাড়ি টা কেমন হয়ে গেছে।
চেয়ারম্যানঃ আচ্ছা দাঁড়ান আমি অসি সাহেব কে ফোন করে বলি।
তারা যদি যেতে দেয় অবশ্যই যাবেন আপনারা।
চেয়ারম্যান সাহেব থানায় অসি সাহেব কে ফোন দিলো।
অনেকক্ষণ বুঝানোর পর অসি সাহেব বুঝলো।
কিন্তু শর্ত দিলো সাক্ষী আর আসামি আরো আছে কি না
তাদের ধরার জন্য ইমরানের বউকে যখন থানায় ডাকবে ঠিক তখনই তাকে আসতে হবে। চেয়ারম্যান সাহেব লাউডস্পিকারে কথা বলতেছিলো,
অসির কথা শুনে রিপা ইশারায় চেয়ারম্যান সাহেব কে বললো আমি রাজি আছি।
চেয়ারম্যান সাহেবও অসি কে বললো ঠিক আছে
যখন ডাকবেন তখন রিপা থানায় যেতে রাজি আছে।
চেয়ারম্যান সাহেব সব বলে সেখান থেকে চলে গেলো।
তিনিও আজ দুদিন ধরে ঠিক মত ঘুমাতে আর খেতেও পারতেছে না।
রিপা ঘরে ঢুকে তার আর তার ছেলে রাফিনের সব কাপড় ব্যাগে ভরে ঘরে তালা মেরে বাইরে এলো।
রিপাঃ চাচা চাচি বাড়িটার দিকে লক্ষ্য রাখবেন।
আমার স্বামী ছাড়া পেলেই আমি চলে আসবো।
আর জমি গুলো আপনারা চাষ করিয়েন যা ফসল উঠবে এর থেকে আমাদের মা ছেলে কে দিয়েন। আর যদি আপনার ভাতিজার কোন হয়ে যায়,
তাহলে সব কিছু আমার ছেলের নামে দিয়েন।
সারাজীবন দরকার হলে বিধবা হয়ে থাকবো আমি( কেঁদে)
চাচাঃ ওসব নিয়ে টেনশন করতে হবে না তোমাকে বউ মা।
চেষ্টা তো করে যাচ্ছি ইমরান কে জামিন করার জন্য। দেখি বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে।
চাচিঃ বউ মা আগেই বিধবা হতে চাচ্ছো তুমি।
যদি ইমরান অপরাধ না করে কিংবা অন্য কেউ এটা করেছে তখন।
আর হ্যাঁ ইমরানের যত সম্পত্তি সব তো সন্তানের।
এখানে তো আমরা ভোগ দখলের কেউ না।
কিন্তু তুমি থাকলে ভালো হতো, ঈশিতা কে অন্তত তুমি দেখতে পারতে।
রিপাঃ চাচা চাচি, কি করে আপনাদের কে বোঝাই।
মন যেতে চাচ্ছে না এ বাড়ি ছেড়ে। আজ ১০ বছর ধরে এই বাড়িতে আমি।
কিন্তু এখন এই অবস্থায় পুরুষহীন বাড়িতে কেমন করে একা থাকবো?
তাছাড়া আপনাদের ভাতিজা সামান্য সাইকেল আর জামার জন্য
নিজের মেয়ে (কেঁদে ফেললো)
চাচিঃ থাক বউমা আর কেদো না অনেক কেঁদেছো তুমি।
রিপাঃ চাচি কথা দিতেছি,
আবার সব স্বাভাবিক হলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই
আমি আমার স্বামীর এই ভিটে বাড়িতে আসবো।
চাচাঃ বেয়াইন আমাদের নাতি টা কে দেখে রাখবেন।
আর পারলে রিপাকে একটু সঙ্গ দিয়েন, মেয়েটা অনেক ভেঙ্গে পড়েছে।
রিপার মাঃ বেয়াই ওসব আপনাকে ভাবতে হবে না।
আপনি জামাই কে যেমন করে পারেন জামিন করে বের করে নিয়ে আসুন।
চাচাঃ আমি আর চেয়ারম্যান সাহেব তো চেষ্টা করেই যাচ্ছি।
রিপাঃ হ্যাঁ চাচা, বাড়িটার দিকে খেয়াল রাখিয়েন
রিপা আর ওর মা বাড়ি থেকে চলে গেলো।
চলবে...